করোনার ধাক্কায় যখন মানুষের আয় রোজগারে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয়। এমন পরিস্থিতিতে জীবন যাত্রার ব্যয় কমাতে তড়ি-ঘড়ি দেখা দিয়েয়ে বিভিন্ন দেশে।
লন্ডন, নিউইয়র্ক, টরন্টো, সিডনি সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বৃহৎ অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়া শহরগুলোতে কমানো হচ্ছে ব্যক্তি পর্যায়ের আবাসন খরচ।
উল্লেখযোগ্য হারে কমছে বাসাবাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া। মার্কিন দৈনিক ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, সাধারণত বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপের কারণে এসব শহরে বাসা-ভাড়া বেশি হয়ে থাকে।
এবার করোনার কারণে সব বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ভর্তি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।
ফলে এসব শহরের বেশিরভাগ অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে আছে। তাই একেবারেই ভাড়া দিতে না পারার চেয়ে কম ভাড়ায় সেগুলো দিতে চান মালিকরা।
সানফ্রান্সিসকোয় একটি স্টুডিওর গড় মাসিক ভাড়া সেপ্টেম্বরে এক বছর আগের চেয়ে ৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৫ ডলারে; জাতীয়ভাবে যা কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রপার্টি খাতের তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘কোরলজিক ইনকরপোরেশন’-এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান টিম ললেস বলেন, এখন শহরগুলোতে অনেক কম দামে বাসা ভাড়া দেয়া হচ্ছে।
কারণ সরবরাহ অনেক বেশি, কিন্তু ভাড়াটিয়ার সংখ্যা কম।
সিডনি সিটি সেন্টার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে একটি এলাকায় থাকেন ক্রিস্টিনা চুং নামের এক যুবক। তিনি তিনজনের সঙ্গে একটি বাসা ভাগাভাগি করেন।
সপ্তাহে ৮৯৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলারের জায়গায় এখন তাকে দিতে হয় ৮১০ ডলার। চুং বলেন, ‘বর্তমান চুক্তির শেষে আমি আরেকবার ভাড়া কমানো চেষ্টা করব। অন্যথায় কম ভাড়ার কোনো অ্যাপার্টমেন্টে চলে যাব।
‘ ২০১৩ সালের পর সবচেয়ে কম টাকায় ভাড়া হচ্ছে নিউইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটনের অ্যাপার্টমেন্টগুলো।
খালি পড়ে আছে বহু অ্যাপার্টমেন্ট। শহরে গড়ে ভাড়া কমেছে ১১ শতাংশ পর্যন্ত। অফিসগুলোতে কর্মী সংখ্যা খুবই কম।
বিনোদন বিষয়ক কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ। তাই মানুষের আনাগোনা একেবারেই কম। তাই জৌলুস হারিয়েছে শহরটি।
উচ্চাভিলাষী তরুণদের স্বপ্নের ঠিকানা সানফ্রান্সিকোর বে অ্যারেনা। এখানে অ্যাপার্টমেন্টের উচ্চ ভাড়ার কথা সর্বজনবিদিত।
তাই তো সিলিকন ভ্যালির বহু কর্মীকে রাস্তায় পার্ক করে রাখা আরভি গাড়িতে রাত্রিযাপন করতে হয়।
এখন সময় ভিন্ন। এখন প্রযুক্তি খাতের ফার্মগুলো স্টাফদের বলে দিচ্ছে, আগামী বছর তাদের অফিসে না এসে দূরে থেকে কাজ করতে হবে, সম্ভবত এটি স্থায়ীভাবেও হতে পারে।
এ কারণে বাসাভাড়াও দ্রুত কমতে শুরু করেছে।
নিউইয়র্কের পর উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্র টরন্টোয় বহু অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে আছে, সংগত কারণে ভাড়াও কমছে।
রিসার্চ ফার্ম আরবানেশন ইনকরপোরেশনের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর তৃতীয় প্রান্তিকে ভাড়া কমেছে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
মহামারীর কারণে অভিবাসীদের ঢল থেমেছে, অন্যদিকে নগরবাসী চাইছে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে একটু বেশি জায়গা নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে, তাই মূল শহর ছেড়ে শহরতলি কিংবা গ্রামের দিকে চলে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কারণে বিদেশী উচ্চ বেতনের নির্বাহীরা শহরে
অস্থায়ী বাসার খোঁজ করছেন। এ কারণে লন্ডনে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া কমে যাচ্ছে। ব্রোকার নাইট ফ্রাংকের তথ্যমতে, লন্ডনে
বিত্তশালীদের এলাকায় সেপ্টেম্বরে ভাড়া কমেছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। মাত্র ৫০
কিলোমিটার প্রস্থ আর আয়তনে নিউইয়র্ক শহরের চেয়েও ছোট নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত বিদেশী
শ্রমিকনির্ভর। সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে, যদিও ব্যক্তিমালিকানার অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া এক বছর
আগের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে বলে জানায় রিয়েল এস্টেট পোর্টাল এসআরএক্স প্রপার্টি। এমনকি ২০১৩ সালের রেকর্ড
ভাড়ার চেয়েও এখন ১৭ শতাংশ কম। এছাড়া বাড়ি বিক্রির হারও দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক
রাজধানীতে ভাইরাস সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমছে, গ্রীষ্ম ঘনিয়ে আসায় সমুদ্রসৈকতও তৈরি হচ্ছে। কিন্তু শহরে এত দ্রুতই
তার প্রভাব পড়ছে না। সবকিছু বদলে গেছে। অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া কমছে, আর শহরতলিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা।
শহরে মে মাসে অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে ছিল ১৬ শতাংশ, গত মাসে যা ছিল ১৩ শতাংশ।
অথচ কভিড-১৯ পূর্ব সময়ে এ হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। সীমান্ত বন্ধ থাকা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা না আসায় এই প্রভাব।