ফেসবুক থেকে আয়: আমরা ফেসবুক শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যক হিসেবে ধরে নেই। কিন্তু আপনি জানেন যে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক কাজে লাগিয়ে মানুষ এখন অনলাইন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে। এমনকি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ তৈরি করে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে ফেসবুক থেকে আয় করছে। তাছাড়া ফেসবুক পেজে ভিডিও আপলোড করে ইউটিউবের মত ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা সমম্ভব হচ্ছে।
তাছাড়াও ফেসবুকে আপনার জনপ্রিয়তা থাকলে আপনি বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুক হতে সহজে আয় করতে পারবেন। আমরা আজকের পোস্টে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। আপনি যদি জানতে চান কিভাবে ফেসবুক হতে টাকা আয় করতে হয়, তাহলে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তাহলে আমার বিশ্বাস আপনিও ফেসবুক থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা আয় করতে পারবেন।
বর্তমান সময়ের সবচাইতে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। সেই জন্য ফেসবুক নিয়ে নতুন করে আলোচনা করার কিছু নেই। আমার ৫ বছরের ছেলেও মোবাইল হাতে পেলে ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করে। সে মোবাইল না পেলে তার মাকে এবং আমাকে প্রায় বলে থাকে আব্বু আপনার মোবাইলটা আমাকে দাও, আমি ফেসবুক ব্যবহার করব। প্রথম প্রথম ছেলের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হতাম, কিন্তু এখন সেটা আমার জন্য স্বাভাবিক হয়েগেছে।
এখনকার সময়ে এটা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে, ফেসবুক হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। পুরো বিশ্ব মানবের একটি বিরাট অংশ ফেসবুক এর সাথে যুক্ত হয়ে আছে। সারা বিশ্বে প্রতি মাসে ২.৪ বিলিয়ন একটিভ ফেসবুক ইউজার রয়েছে। তার মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১.৪৯ বিলিয়ন লোক ফেসবুক ব্যবহার করে। আপনি শুনলে আরো অবাক হবেন যে, প্রতি এক সেনেন্ডে গড়ে ৫ টি নতুন ফেসবুক একাউন্ট তৈরি হয়ে থাকে। এই পুরো কাজ নিয়ন্ত্রন করার জন্য ফেসবুকের ৪৪৪৯২ জন স্পেশালিস্ট প্রতিদিন কাজ করে থাকে (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)।
প্রথমে বলে রাখছি ফেসবুক একাউন্ট থেকে অর্থাৎ আপানার আমার যে নরমাল ফেসবুক একাউন্ট আছে, যেটি আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি, সেই একাউন্টের মাধ্যমে আমরা সরাসরি ফেসবুক থেকে আয় করতে পারব না। কারণ ফেসবুক একটি ইউজার একাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা ইনকাম করার কোন উপায় রাখেনি।
ফেসবুক এর অসাধারন সব ফিচার্স এর মধ্যে অন্যতম হল ফেসবুক ফ্যান পেজ বা লাইক পেজ। ফেসবুক প্রোফাইলে যেভাবে বন্ধু বাড়ানোর জন্য ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাতে হয় বা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট রিসিভ করতে হয়, ফেসবুক ফ্যান প্যাজ এর ক্ষেত্রে তেমনটি করতে হয় না। আপনার নিজের নামে একটি ফেসবুক লাইক পেজ থাকলে, যে কেউ আপনার পেজে লাইক করতে পারবে। আপনার একটি ফেসবুক পেজ থাকলে এবং সেটিতে প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার বা লাইক থাকলে আপনার ফেসবুক পেজকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুক হতে সহজে টাকা আয় করতে পারবেন।
ফেসবুক পেজ তৈরি করার পর বসে থাকলে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারবেন না। ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার জন্য আপনাকে প্রতিদিন কিছু সময় ব্যয় করতে হবে। কারণ যেকোন উপায়ে টাকা ইনকাম করার জন্য পরিশ্রম ব্যাতীত টাকা আয় করা সম্ভব হয় না। ঠিক একইভাবে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার জন্য প্রথমে আপনার ফেসবুক পেজের লাইক বাড়িয়ে নিতে হবে। ফেসবুক থেকে আয় শুরু করার পূর্বে ফেসবুক পেজের লাইক বৃদ্ধি করে নেওয়া হবে আপনার প্রধান কাজ। ফেসবুকে যেকোন কাজের মাধ্যমে যখন আপনি ফেসবুক পেজের লাইক বাড়িয়ে নিবেন, তখন ফেসবুক থেকে আয়ের পথ আপনার জন্য অনেক সহজ হবে। যখন আপনার ফেসবুক পেজে প্রচুর পরিমানে ফ্যান ফলোয়ার থাকবে তখন ফেসবুক থেকে আয় করার নতুন নতুন উপায় আপনি নিজেই খোজে নিতে পারবেন এবং আয়ের বিভিন্ন উৎস আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। সুতরাং ফেসবুক পেজের লাইক বৃদ্ধি করাই হবে আপনার প্রথম ও প্রধান কাজ।
আর আপনি অবশ্যই জানেন ফেসবুক পেজের লাইক বাড়ানোর কাজটি অমনি অমনি হয়ে যায় না। ফেসবুক পেজের লাইক বাড়ানোর জন্য আপনাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে লোকজন আপনার কাজকে পছন্দ করে। তবেই অন্যান্য ফেসবুক ইউজাররা আপনার পেজটি লাইক করতে শুরু করবে। শুরুর দিকে কাজটি আপনার কাছে কঠিন মনে হলেও নিয়মিত কাজ করলে ধিরে ধিরে আপনার ফেসবুক পেজের লাইক অবশ্যই বাড়তে থাকবে।
আপনার ফেসবুক পেজের লাইক ও ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য নিচে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় শেয়ার করছি। এ কাজগুলো করলে আপনি সহজে আপনার ফেসবুক পেজের লাইক বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
এখানে টপিক বলতে আপনি যে বিষয় নিয়ে ফেসবুকে কাজ করবেন সেটাকে বুঝানো হচ্ছে। টপিক বাছাই করার ক্ষেত্রে আমি বলব আপনি যে বিষয়ে ভালো জানে ও বুঝেন অবশ্যই সেই বিষয়ে ফেসবুক পেজে লেখালেখি করুন। ফেসবুক পেজে লেখালেখি করাটা বর্তমানে এক ধরনের ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে।
আপনি হয়ত দেখে থাকেন যে, যারা ফেসবুকে লেখালিখি করে ফেসবুকে তাদের প্রচুর ফ্যান ফলোয়ার থাকে এবং তারা ফেসবুকে অনেক জনপ্রিয় হয়। কাজেই আপনি যে বিষয়ে পারদর্শি সেই বিষয়ে ফেসবুকে লিখালেখি করে আপনার ফেসবুক পেজের ফ্যান ফলোয়ার ও লাইক বৃদ্ধি করে নিতে পারেন। যেমন: গল্প, কবিতা, উপন্যাস, টেকনোলজি, ফ্যাশন, লাইফস্টাইল ইত্যাদি বিষয়ে লেখালেখি করলে সহজে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়। তাছাড়া আপনি একজন গৃহিনী হয়ে থাকলে বিভিন্ন রিসিপি তৈরি, ফ্যাশন ও ডিজাইন বিষয়ে লেখালেখি করে কিংবা ভিডিও তৈরি করে ফেসবুক পেজের লাইক বৃদ্ধি করে নিতে পারেন।
আপনি যদি শুধুমাত্র শখের বশে মাঝে মধ্যে আর্টিকেল শেয়ার করেন, তাহলে আপনি অল্পদিনে ফ্যান ফলোয়ার বৃদ্ধি করতে পারবেন না। কারণ যারা আপনার পাঠক হবে তারা অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত দেখতে চাইবে। এ ক্ষেত্রে আপনি মাঝে মধ্যে পোস্ট করলে সেই পোস্টগুলো পাঠক এড়িয়ে চলবে। সে জন্য দ্রুত ফেসবুক পেজের লাইক বৃদ্ধি করার জন্য নিয়মিত পোস্ট করে যেতে হবে।
যারা আপনার ফ্যান ফলোয়ার ও শুভাকাঙ্খি হবে তাদের সাথে ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখুন। তারা আপনার পোস্টে কোন ধরনের কমেন্ট করলে সেটির জবাব দেন। কমেন্টে কোন কিছু লেখার না থাকলেও ধন্যবাদ কিংবা ওয়েলকাম জানাবেন। তাছাড়া যারা আপনাকে পার্সন্যালি ফেসবুকে ম্যাসেজ করবে তাদের সাথে ভাব না দেখিয়ে মিনিমাম হাই-হ্যালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ম্যাসেজের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতেকরে আপনি ফেসবুকে আরো অল্পদিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারবেন।
অনলাইনে হাজারো ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে যেগুলোর অনেক জনপ্রিয়তা আছে, আপনি সেগুলোতে জয়েন করুন। মাঝে মধ্যে আপনার দু-একটি পোস্ট সরাসরি ঐ সমস্ত ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করুন এবং লেখার শেষে আপনার ফেসবুক পেজটির লিংক শেয়ার করে সেটিতে লাইক করার জন্য অনুরোধ করুন। আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলে লোকজন আপনার ফেসবুক পেজ অবশ্যই লাইক করবে।
আপনার ফেসবুক পেজে যখন প্রচুর পরিমানে ফ্যান-ফলোয়ার ও লাইক থাকবে তখন থেকে আপনি বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা শুরু করতে পারবেন। ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ফেসবুক লাইক পেজ বা ফ্যান পেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষকরে আপনার কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানের নামে ফেসবুক পেজ তৈরি করে খুব সহজে প্রতিষ্ঠানের প্রচারনা চালাতে পারেন। এছাড়াও যখন আপনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে প্রচুর পরিমানে লাইক থাকবে তখন আপনি চাইলে সহজে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পন্য বা প্রোডাক্ট ফেসবুক পেজে আপলোড করে পন্যের প্রচার ও প্রসার চালিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সহজে ক্রেতার নিকট পন্য বিক্রি করতে পারবেন।
সাধারণত ফেসবুক অফিসিয়ালি দুটি উপায়ে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে টাকা আয় করার সুযোগ দেয়। যেই টাকা সরাসরি ফেসবুক হতে আপনাকে পরিশোদ করা হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে কারো সাথে কোন ধরনের কনটাক করার প্রয়োজন হবে না। আপনি সরাসরি আপনার ফেসবুক পেজকে মনিটাইজ করে ফেসবুক হতে টাকা আয় করতে পারবেন।
সম্প্রতি ইউটিউবের মত ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে ভিডিওতে বিজ্ঞাপন শো করানো মাধ্যমে ফেসবুক থেকে আয় করা সম্ভব হচ্ছে। Facebook এ আয় করার এই নতুন পদ্ধতিকে বলা হয় “Facebook Video Monetization বা In-Stream Ads. এই In-Stream Ads বা ভিডিও Monetization এর কিছু নিয়ম বা যোগ্যতা রয়েছে, যেগুলো ফিলআপ হলে ফেসবুক পেজে ভিডিও আপলোড করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করা যায়।
ফেসুবক In-Stream Ads হলো এমন একটি সার্ভিস যেটি দিয়ে ফেসবুক পেজে আপলোড করা ভিডিওতে বিজ্ঞাপন বা ads শো করানো যায়। এই বিজ্ঞাপন গুলো যখন লোকজন দেখবে বা ক্লিক করবে তখন আপনি ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। তবে ফেসুবক In-Stream Ads এর বিজ্ঞাপন ফেসবুক পেজ ব্যাতীত অন্য কোথায় ব্যবহার করা যায় না।
ফেসবুক In-Stream Ads সার্ভিস ব্যবহার করার জন্য আপনার ফেসবুক পেজের কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হবে। আপনার ফেসবুকে পেজে নিচের যোগ্যতাগুলো না থাকলে ভিডিওতে In-Stream Ads ব্যবহার করতে পারবেন না।
আপনার ফেসবুক পেজটি ফেসবুক In-Stream Ads এর যোগ্যতা সম্পন্ন কি না সেটি যাচাই করার জন্য প্রথমে আপনার ফেসবুক একাউন্টে লগইন করতে হবে। তারপর ফেসবুক In-Stream Ads এর এই অফিসিয়াল লিংকে ক্লিক করে আপনার ফেসবুক পেজটি In-Stream Ads এর জন্য এলিজিবল কি না সেটা যাচাই করে নিতে পারবেন।
নতুনদের ক্ষেত্রে এটা খুব কমন একটা প্রশ্ন। ফেসবুক এখনো পর্যন্ত ইউটিউবে আপলোড হওয়া ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করতে দিচ্ছে। কিন্তু আপনি অন্যের ভিডিও ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে ফেসবুকে আপলোড দিতে পারবেন না। আপনি হয়ত ভাবছেন আমি অন্যের ভিডিও ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে ফেসবুকে আপলোড করেছি কি না, সেটা কি আর ফেসবুক বুঝতে পারবে? হ্যাঁ, ফেসবুক সেটা বুঝতে পারবে না। তবে কেউ যদি সেই ভিডিও ইতোপূর্বে ফেসবুকে আপলোড করে থাকে, তাহলে সেটি ফেসবুক বুঝতে পারবে।
Instant Articles হচ্ছে ফেইসবুক এর মোবাইল Publishing টুল। যার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগের ডিজাইনকে কাষ্টমাইজ করে অপটিমাইজ করার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে লোড নেওয়া হয়। অপটিমাইজ করার ক্ষেত্রে ফেইসবুক Instant Articles ওয়েবসাইটের ডিজাইনকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র আর্টিকেল গুরুত্ব দিয়ে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটের কনটেন্ট দ্রুত লোড নিতে সাহায্য করে।
ফেসবুক Instant Articles এর দুটি সুবিধা রয়েছে। Instant Articles ব্যবহার করে এক দিকে আপনার ব্লগের পোস্ট দ্রুত গতির বানাতে পারবেন, অন্যদিকে Instant Articles এর মাধ্যমে পোস্টের ভীতরে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে ফেসবুক হতে আয় করতে পারবেন। সাধারণত অনলাইন নিউজ সংক্রান্ত ওয়েব পোর্টালগুলো ফেসবুক Instant Articles হতে বেশি টাকা আয় করতে পারে।
Instant Articles ব্যবহার করার জন্য আপনার একটি ব্লগ প্রয়োজন হবে এবং ব্লগে কমপক্ষে ২০ টি পোস্ট থাকতে হবে। আপনার ব্লগে ২০ টি পোস্ট থাকলে সেই পোস্টগুলো আপনার ফেসবুক পেজে শেয়ার করবেন। শেয়ার করার পর আপনি Instant Articles এর টুলস হতে আপনার ব্লগের Instant Articles অনুমোদন করার জন্য ফেসবুকের কাছে আবেদন করতে হবে। ফেসবুক ৫/৭ দিনের মধ্যে আপনার আবেদন রিভিউ করে যোগ্য মনে করলে আপনার পেজের জন্য Instant Articles অনুমোদন দেবে।
কেবলমাত্র ফেসবুক Instant Articles অনুমোদন হলে আপনার ব্লগের পোস্টের ভীতরে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারবেন। বিজ্ঞাপন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে গুগল এডসেন্স এর মত আপনার ব্লগের বিভিন্ন জায়গাতে বিজ্ঞাপনের কোড বসাতে হবে না। ফেসবুক আপনার ব্লগ পোস্টের বিভিন্ন জায়গাতে অটোমেটিক বিজ্ঞাপন শো করবে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার ব্লগে গুগল এডসেন্স বিজ্ঞাপন থাকলে সেটি শো হবে না। অধিকন্তু ফেসবুক Instant Articles শুধুমাত্র মোবাইলের ফেসবুক এ্যাপ এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ফেসবুক এর ওয়েব ভার্সনে Instant Articles সাপোর্ট করে না। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য উপরের লিংক হতে আমাদের ব্লগের ফেসবুক Instant Articles সম্পর্কিত পোস্টটি পড়ে নিবেন।
আপনার কাছে যখন প্রচুর জনপ্রিয় একটি ফেসবুক পেজ থাকবে এবং আপনার পেজে প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার থাকবে, তখন বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটার আপনাকে তাদের পেজে লাইক বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিংবা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের পোস্ট শেয়ার করে সেটা মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য অফার করবে। তখন আপনি তাদের নিকট হতে বিভিন্ন অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের ফেসবুক পেজ কিংবা ওয়েবসাইটের পোস্ট আপনার ফেসবুক পেজে শেয়ার করার মাধ্যমে ক্লায়ান্টের নিকট থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। সাধারণত বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটারগণ ১০০০ লাইকের বিনিময়ে ৫০০-৭০০ টাকা নিয়ে থাকেন। যাদের ফেসবুক পেজে প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার আছে, তাদের ক্ষেত্রে ১০০০ লাইক পাইয়ে দেওয়া মাত্র ৫ মিনিটের কাজ।
অনলাইন মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফেসবুক পেজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আপনার কাছে ভালোমানের ফেসবুক পেজ থাকলে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানির কাছে আপনার ফেসবুক পেজটি বিক্রি করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারেন। সাধারণ এক লক্ষ Like থাকা একটি ফেসবুক পেজ এক লক্ষ টাকার চাইতে অধিক দামে বিক্রি করা যায়।
অনলাইন মার্কেটিং এর কাজটি ফেসবুক অনেকাংশে সহজ করে দিয়েছে। আপনার যেকোন ধরনের ছোট খাটো ব্যবসা থাকলে আপনি খুব সহজে সেটির ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে খুব সহজে আপনার পন্য ক্রেতাদের হাতে পৌছে দিতে পারেন। আপনার ফেসবুক পেজে লাইক বেশি থাকলে লোকজন আপনার প্রোডাক্টগুলো দেখতে পাবে এবং কেউ কেউ সেটি কিনতে অবশ্যই আগ্রহ দেখাব। আপনি যদি সততার সাথে পন্য ডেলিভারি দেন, তাহলে প্রশংসা শুনে আরো হাজারো লোক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আপনার প্রোডাক্ট কিনার জন্য আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করে বিক্রয়ের উপর কমিশন নিয়ে অনলাইন থেকে আয় করাকে সহজ ভাষায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি বলতে এখন শুধুমাত্র ডিজিটাল প্রোডাক্টকে না বুঝিয়ে সব ধরনের প্রোডাক্টকে বুঝায়। আপনি নিশ্চয় দেখে থাকেন যে, Amazone, eBay, Daraz, BD Shop এর মত আরো বিভিন্ন ধরনের অনলাইন মার্কেট থেকে মানুষ এখনো নিয়মিত প্রোডাক্ট কিনে থাকে। আপনি চাইলে এ ধরনের মার্কেটপ্লেসগুলোতে একটি একাউন্ট খোলে খুব সহজে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য Amazone, eBay, Daraz, BD Shop সহ অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস গুলোতে আপনি প্রথমে একাউন্ট করে নিবেন। তারপর ঐ ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস গুলোর প্রোডাক্ট হতে আপনার পছন্দমত বিভিন্ন পন্যের রেফারাল লিংক তৈরি করে সেটি ফেসবুক পেজে শেয়ার করবেন। আপনার রেফাল লিংকে ক্লিক করে যখন কেউ সেই পন্য কিনবেন তখন পন্যটির দাম হতে শতকরা হিসেবে আপনাকে কিছু টাকা দেওয়া হবে। এভাবে আপনি যত বেশি প্রোডাক্ট সেল করে দিতে পারবেন আপনি তত বেশি টাকা আয় করতে পারবেন। সাধারণত ফেসবুকে যাদের প্রচুর পরিমানে ফলোয়ার আছে তারা এই কাজটি খুব সহজে করতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং জব পাওয়ার জন্য ফেসবুকে নির্দিষ্ট কিছু ভালোমানের গ্রুপ আছে। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয় নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করে ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন। যেমন: ফ্রিল্যান্স রাইটিং, ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিং, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্সিং সোশাল মিডিয়া ইত্যাদি। তবে গ্রুপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অ্যাকটিভ গ্রুপগুলো নির্বাচন করে নিতে হবে। সাধারণত কোন গ্রুপগুলো ভালো সেটা আপনি দেখলে নিজেই বুঝতে পারবেন।
অনলাইনে পন্য কেনাকাঠার ক্ষেত্রে ফেসবুক গ্রুপ আরো অধিক জনপ্রিয়। ফেসবুকে এমন হাজারো গ্রুপ রয়েছে যেখানে লক্ষ লক্ষ মেম্বার রয়েছে। আপনার কোন ব্লগ থাকলে ব্লগের পোস্ট বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে আপনার ব্লগের আয় সহজে বাড়িয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের কেনাকাঠার গ্রুপ রয়েছে। আপনি সেই গ্রুপগুলোতে জয়েন করে আপনার প্রেডাক্ট বিক্রি করে ফেসবুক থেকে আয় করে নিতে পারেন।
উদাহরণ স্বরুপ, শুধুমাত্র সিলেটের লোকের জন্য জন্য ফেসবুকে “সিলেটের বেচা-কেনা” নামে একটি বিশাল গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপে বর্তমানে কয়েক লক্ষ মেম্বার রয়েছে। এখানে সিলেটের লোকজন তাদের বিভন্ন ধরনের প্রোডাক্ট ক্রয় বিক্রয় করছে। আমি নিজেও এই গ্রুপ থেকে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করেছি।
অনলাইন বিজ্ঞাপন বা ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ফেসবুক বিজ্ঞাপন বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। আপনি চাইলে ফেসবুকে বিভিন্ন জিনিসের বিজ্ঞাপন দিয়ে আপনার প্রোডাক্ট বিক্রয় করে অনলাইন থেকে আয় করতে পারেন। ধরুন আপনার কোন একটি প্রোডাক্ট আছে যেটি আপনি বিক্রি করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে আপনি খুব সহজে অল্প টাকা খরছ করে পন্যটির বিজ্ঞাপন ফেসবুকে দিয়ে সেটি বিক্রয় করতে পারেন।
আসলে বর্তমানে অনলাইন মার্কেটিং তথা ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব এত বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেটা লিখে শেষ করা যাবে না। আপনি চেষ্টা করলে নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে উপরের উপায়গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে ফেসবুক থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
তাছাড়া ফেসবুকের জনপ্রিয়তা যে হারে বাড়ছে তাতেকরে ভিডিও শেয়ারিং এর ক্ষেত্রেও ফেসবুক একদিন ইউটিউবকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ ইউটিউবে শুধুমাত্র ভিডিও শেয়ার করা যায় কিন্তু ফেসবুকে একসাথে আর্টিকেল, ছবি, ব্লগ পোস্ট করার পাশপাশি ভিডিও আপলোড করা যায়। এ জন্য ধীরে ধীর মানুষ ইউটিউব এর চাইতে ফেসবুককে বেশী গ্রহন করে নিবে। কাজেই আপনি চাইলে শুধু শুধু ফেসবুকে বেকার সময় ব্যয় না করে সামান্য মেধা কাজে লাগিয়ে একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে ভবিষ্যতের জন্য ফেসবুক থেকে টাকা আয়ের পথ তৈরি করে নিতে পারেন।